মাধ্যমিকের জীবন বিজ্ঞান বিষয়ের মক টেস্ট দিন | Madhyamik Life Science Mock Test

svmcm 2024-25 Swami Vivekananda Scholarship

SVMCM 2024-25 | স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ ২০২৪-২৫

Global Warming

বিশ্বউষ্ণায়ন (Global Warming)| Defination, Causes, Effects and Solutions

Last Updated on December 12, 2021 by Science Master

বিশ্বউষ্ণায়ন (Global Warming)

আমাদের পৃথিবী সময়ের সাথে সাথে যত আধুনিক হচ্ছে সেই আধুনিকতার সঙ্গে উদ্ভাবিত হচ্ছে নিত্য নতুন উত্তরাধুনিক সব সমস্যা। সভ্যতার আধুনিকীকরণ করতে গিয়ে মানুষ সভ্যতার আস্তিত্বকে ফেলে দিচ্ছে সংকটের মুখে। বর্তমানকালের ভোগবিলাস মূলক জীবন যাপনের যুগে মানুষের লালসামূলক কৃতকর্মের ফলে এমন কিছু অমঙ্গল জনক আভাসের উদ্রেগ ঘটেছে যা পৃথিবীর সকল বৈজ্ঞানিক তথা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক পৃথিবীতে এই ধরনের সকল সমস্যা গুলির মধ্যে যেটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং গুরুত্বপূর্ণ তা হল বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) ।

বিশ্ব উষ্ণায়ন অর্থাৎ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রের গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলার ফলে পৃথিবীর জলবায়ুতে ঘটে যাচ্ছে স্থায়ী পরিবর্তন। বিজ্ঞানীদের ভাষায় সাধারণভাবে বলতে গেলে বিশ্ব উষ্ণায়ন পৃথিবীর ক্ষেত্রে  একটি অতি সাধারন জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা। এই বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর আর্বিভূত হয়। সেই সময় পৃথিবীর উষ্ণতা মহাজাগতিক কারনে কিছুটা বেড়ে যায়। আবার সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি নিজে থেকেই বদলে যায়। কিন্তু বর্তমান কালে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে এত আলোচনা হয়ে থাকে তা কোনো স্বাভাবিক জাগতিক ভৌগলিক প্রক্রিয়া নয়। এটি হল পৃথিবীর উপর মানুষের যথেচ্ছাচারের ফলে সমগ্র পৃথিবীর জল, স্থল এবং সামগ্রিক বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ঘটনা।  

বিশ্ব উষ্ণায়নের (Global Warming) কারনঃ-

 মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কার্যকলাপ বহুল পরিমান গ্রীনহাউস গ্যাস পরিবেশে মিশছে। এরফলসরূ্প পৃথিবীর তাপমাত্রা উত্তরাত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের কার্যকলাপের ফলে বিশ্ব জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটছে তার কারন গুলি হল-   

  • অত্যধিক জীবাশ্ম জ্বালানির দহনঃ- বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি, যথা কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি হাইড্রোকার্বন জাতীয় যৌগ দহনের ফলে বায়ুতে CO2, CO, SO2 প্রভৃতি ক্ষতিকারক গ্যাস মেশে। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে শক্তির প্রধান উৎস হিসাবে কলকারখানা ও যানবাহন চালাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ফলে বায়ুতে সমান হারে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমান বাড়ছে। তাই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • অবাধে বৃক্ষচ্ছেদনঃ- স্বাভাবিক উদ্ভিদই বায়ুমণ্ডলের একমাত্র সম্পদ যা বায়ুমণ্ডলের CO2 কে শোষণ করে O2 পরিবেশে মুক্ত করে। কিন্তু কৃষিকাজ, বাসস্থাননির্মান, নগরায়ন সম্প্রসারন, জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন যার কারনে মানুষ অবাধে গাছ কেটে বনভূমি পরিস্কার করে দিচ্ছে। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবে বায়ুতে CO2 এর পরিমান বেড়েই চলেছে। উপরন্তু জ্বালানি কাঠের ব্যবহারে CO2 আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বায়ুমণ্ডের উষ্ণতা বেড়েই চলেছে।
  • দ্রত নগরায়নঃ- বাসস্থানের চাহিদা মেটাতে অধিক দ্রুতহারে নগরায়নের ফলে সিমেন্ট, ইট লোহা দ্বারা নির্মিত বড়ো বড়ো অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে। এগুলির তাপ শোষন ও বিকিরন করার ক্ষমতা প্রচুর। তাই শহরাঞ্চল সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনায় বেশি হয়।
  • দ্রুত শিল্পায়নঃ- শিল্পের প্রয়োজনে কলকারখানার সংখ্যা উত্তরাত্তর বাড়ছে। ফলে এসব কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, গ্যাস, ছাই ও নানান আবর্জনা বায়ুকে দূষিত করছে, তেমনি গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • অন্যান্য কারনঃ- উপরিউক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও CFC এর অতিব্যবহার, নাইট্রোজেন সারের অতিব্যবহার, পারমানবিক বিস্ফোরণ, পার্বত্য অঞ্চলে অত্যধিক ঝুমচাষ, মৃত্তিকার ওপর অধিক আচ্ছাদন ইত্যাদির প্রভাবেও বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে চলেছে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের (Global Warming) ইতিহাসঃ-

আধুনিক বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিস্থিতি ইতিহাসে উদ্ভুত স্বাভাবিক বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিস্থিতির তুলনায় সম্পূর্ণ রূপে আলাদা। আধুনিক যন্ত্র দ্বারা নথিভুক্ত তাপমাত্রা দলিল অনুযায়ী 1860 সাল থেকে 1900 সালের মধ্যে পৃথিবীর ভূভাগ ও সমুদ্র জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল 1.4o F বা 0.75oC । সেইখানে 1979 সাল থেকে প্রতি দশকে এই তাপমাত্রা 0.14 থেকে 0.22oC হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে 1850 খ্রিস্টাব্দ অব্দি পৃথিবীর তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সুসাম্য বজায় ছিল। তারপর থেকে সময় যত এগিয়েছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ততই বৃদ্ধি পেয়েছে।  নাসা-র (NASA) গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ-এর (Goddard Institute for Space Studies) করা অনুমিত হিসাব অনুযায়ী 1800 শতকের শেষের দিক থেকে নির্ভরযোগ্য তাপমাত্রা মাপক যন্ত্রের ব্যাপক বিস্তার লাভের পর 2005 সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণ বছর, যা ইতিপূর্বে লিপিবদ্ধ উষ্ণতম 1998 সাল থেকে এক ডিগ্রীর কয়েক শতাংশ বেশি উষ্ণ। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এবং যুক্তরাজ্য জলবায়ু গবেষণা ইউনিট, একটি অনুমিত হিসাব থেকে 2005 সালকে 1998 সালের পরে দ্বিতীয় উষ্ণতম বছর হিসেবে বিবৃত করে।[1][2] এভাবে চললে 2050 এর মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে 3.5oC।   

বিশ্ব উষ্ণায়নের (Global Warming) ফলাফলঃ-

   বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল সম্পর্কে নাতি দীর্ঘ একটি আলোচনা করা অত্যান্ত কষ্টকর। কারন এর ফলাফল এতই বিস্তৃত ও ব্যাপক যে তাকে প্রতিবেদনে একটি অংশ লিপিবদ্ধ করা প্রায় অসম্ভব। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ এবং ভয়ঙ্কর ফলরূপে যা উল্লেখ করা যেতে পারে তা হল –

  1. আমাদের পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করবে।
  2. বরফ গলা জল সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে থাকবে।
  3. বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছে যে কয়েক দশকের পর উপকূলবর্তী অঞ্চল যেগুলি আছে যেমন – ভারত, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, হল্যান্ড জলের তলায় চলে যেতে পারে।
  4. বিশ্ব উষ্ণায়নের পর আমাদের পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে খরা অথবা বন্যা দেখা যেতে পারে।
  5. বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আমাদের পৃথিবীর বুকে প্রচণ্ড ঘুর্ণি ঝড় ও নিন্মচাপের সৃষ্টি হতে পারে।
  6. বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে তার ফলে মানুষের হৃদযন্ত্রের নানান অসুখ বৃদ্ধি পাবে।
  7. সর্বপরি বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভীষণভাবে বিঘ্নিত হবে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) নিয়ন্ত্রনঃ-

মানব সভ্যতা ধ্বংসের মুখে প্রায়। এই নিয়ে পরিবেশবিদ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবদিক থেকে চাপ বাড়ছে সমস্যার সমাধানের জন্য। ট্রাইবুনাল, গ্রিনবেঞ্চ ইত্যাদি গঠন করা হয়েছে। কিছু সমাধানও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যেমন-

  • পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে তেল ও কয়লার ব্যবহার কমিয়ে অচিরাচরিত শক্তির উৎসকে ব্যবহার করতে হবে।
  • গ্রিনহাউস গ্যাস বিশেষ করে CO2 মাটির আটকে রাখতে হবে।
  • কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে হবে।
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন ও গ্রিনহাউস প্রভাব নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ। সরকারি সংস্থা, NGO পারস্পরিক সহায়তায় নানা প্রকারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্দেশ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ করতে এইসব দেশগুলি পরস্পরের মধ্যে একাধিক চুক্তি ও সম্মেলন সম্পাদন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলি হল – বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, টরেন্টো সম্মেলন, বসুন্ধরা সম্মেলন, কিয়েটো প্রটোকল, প্যারিস সম্মেলন ইত্যাদি।
  • সর্বশেষ একটি কথা বলতে হয় পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে বাঁচতে মানুষের সচেতনতাকে বাড়াতে হবে।

আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ- পরিবেশ রক্ষা আমাদের কর্তব্য। আমাদের বেঁচে থাকার আধারকে টিকিয়ে রাখলেই আমরা টিকে থাকবো। তাই যে সকল ক্ষতিকারক উপাদানের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে সেগুলি যাতে কম উৎপাদিত হয় সেবিষয়ে পরিচালনা করার দায়িত্ব মানুষের।

WhatsApp Channel Follow
Telegram Channel Join Now
Facebook Page Follow

1 thought on “বিশ্বউষ্ণায়ন (Global Warming)| Defination, Causes, Effects and Solutions”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top