Last Updated on January 7, 2023 by Science Master
মৌলের পৃথকীকরণের সাধারণ নীতি (General principles of isolation of elements)
1.ধাতুবিদ্যা কি? ধাতু নিষ্কাশনের (isolation of elements) বিভিন্ন ধাপ গুলি লেখো।
উঃ- আকরিক থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ধাতু নিস্কাশ্ন ও বিশুদ্ধিকরণের পদ্ধতিকে ধাতুবিদ্যা বলে।
আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশনের বিভিন্ন ধাপ- (i) আকরিকের চুর্ণিকরন (ii) গাঢ়িকরন (iii) ভস্মীকরণ (iv) তাপজারন (v) বিজারণ (vi) ধাতুর পরিশোধন
2.খনিজ ও আকরিকের সংজ্ঞা দাও।
উঃ- ভূ-গর্ভে বা ভূ-পৃষ্ঠে প্রাপ্ত প্রকৃতিজাত অজৈব পদার্থ সমূহ যাদের মধ্যে ধাতুগুলি মুক্ত অবস্থায় বা যৌগরূপে অবস্থান করে বা অন্যান্য অশুদ্ধির সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে, তাদের খনিজ বলে।
যে সব খনিজ থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ এবং কম খরচে উচ্চ গুণ মান সম্পন্ন ধাতুর নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় কেবলমাত্র সেইসব খনিজ পদার্থ গুলিকে আকরিক বলে।
3.তাপজারন ও ভস্মীকরণ পদ্ধতি কি?
উঃ- কার্বনেট ও হাইড্রক্সাইড আকরিককে ওদের গলনাঙ্কের কম তাপমাত্রায় বায়ুর অনুপস্থিতিতে বা পরিমিত বায়ুপ্রবাহে উত্তপ্ত করে ধাতব অক্সাইডে পরিণত করার পদ্ধতিকে ভস্মীকরণ বলে।
সালফাইড আকরিককে ওর গলনাঙ্কের কম তাপমাত্রায় অতিরিক্ত বায়ুপ্রবাহে উত্তপ্ত করে ধাতব অক্সাইডে পরিণত করার পদ্ধতিকে তাপজারন বলে।
4.তাপজারন ও এর দুটি পার্থক্য লেখো। বিগালক কাকে বলে?
উঃ-
ভস্মীকরণ | তাপজারণ |
i. এই প্রক্রিয়ায় আকরিককে ওদের গলনাঙ্কের কম তাপমাত্রায় বায়ুর অনুপস্থিতিতে বা পরিমিত বায়ুপ্রবাহে উত্তপ্ত করা হয়। | i. এই প্রক্রিয়ায় আকরিককে ওদের গলনাঙ্কের কম তাপমাত্রায় অতিরিক্ত বায়ুপ্রবাহে উত্তপ্ত করা হয়। |
ii. এই প্রক্রিয়ায় উদবায়ী অপদ্রব্য অপসারিত হয়। | ii.উদবায়ী অপদ্রব্য অপসারিত হয় ও আকরিকটি জারিত হয়। |
iii. কার্বনেট ও অক্সাইড যৌগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। | iii.সালফাইড আকরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। |
বিগালক– ধাতু নিষ্কাশনের বিগলন প্রক্রিয়ায় তাপজারিত আকরিকের সঙ্গে যে নির্বাচিত রাসায়নিক পদার্থ যোগ করলে আকরিকের খনিজমল ওই পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়ায় অন্য যৌগে রূপান্তরিত হয়ে গলিত অবস্থায় ধাতু থেকে অপসারিত হয়, তাকে বিগালক বলে।
5.থার্মিট পদ্ধতি কি? এর একটি ব্যবহার লেখো।
উঃ- উচ্চ তাপমাত্রায় অক্সিজেনের প্রতি অ্যালুমিনিয়ামের তীব্র আসক্তির জন্য কিছু কিছু ধাতুর ( যাদের তড়িৎ ঋণাত্মকতা অ্যালুমিনিয়াম অপেক্ষা বেশি ) অক্সাইডকে অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণ সহযোগে উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে অক্সাইডগুলি অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা বিজারিত হয়ে গলিত ধাতুতে পরিণত হয়। এটিই হল থার্মিট পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিতে ক্রোমিয়াম (Cr) ও আয়রন (Fe) ধাতু নিষ্কাশন করা হয়।
6.ব্লিস্টার কপার কি? এর থেকে কিভাবে বিশুদ্ধ কপার তৈরী করবে।
উঃ- কপার পাইরাইটস আকরিক থেকে প্রাপ্ত গলিত কপার শীতল হয়ে জমে কঠিন হওয়ার সময় ওর মধ্যে দ্রবীভূত SO2 বুদ বুদ আকারে বেরিয়ে আসে ও উৎপন্ন কপারের গায়ে ফোসকার মতো সৃষ্টি করে, একে ব্লিস্টার কপার বলে।
ব্লিস্টার কপারকে সিলিকার আস্তরণযুক্ত পরাবর্ত চুল্লির মধ্যে স্থানান্তরিত করে নিয়ন্ত্রিত বায়ুপ্রবাহে গলানো হয়। এর ফলে সালফার, আর্সেনিক প্রভৃতি অশুদ্ধিগুলি অক্সাইডে পরিণত হয়ে চুল্লি থেকে বেরিয়ে যায়। আয়রন জারিত হয়ে ফেরাস অক্সাইডে পরিণত হয়ে সিলিকার সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফেরাস সিলিকেট ধাতুমল উৎপন্ন করে। এই ধাতুমলকে অপসারিত করে গলিত কপারের উপর কিছু পরিমাণ কোক চূর্ণ ছড়িয়ে দিয়ে কাঠের দন্ডের সাহায্যে নাড়ানো হয়। কোক চূর্ণ থেকে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইড কিউপ্রাস অক্সাইডকে বিজারিত করে কপারে পরিণত করে।
S+O2=SO2 , 4As+3O2=2As2O3 , 2Fe+O2=2FeO , FeO+SiO2=FeSiO3
Cu2O+CO=2Cu+CO2
7.স্পাইজেল কি? এর কাজ লেখো। ইনভারের উপাদান কী কী?
উঃ- স্পাইজেল হলো কার্বন, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রনের ধাতু সংকর।
এটি স্টিল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
আয়রন ও নিকেল।
8.জার্মান সিলভারের রাসায়নিক সংযুক্তি লেখো। একটি ক্ষারীয় ও একটি আম্লিক বিগালকের নাম লেখো।
উঃ- Cu(25-30%), Zn(25-30%), Ni(40-50%)
একটি ক্ষারীয় বিগালক-লাইমস্টোন (CaCO3 )
একটি আম্লিক বিগালক- সিলিকা (SiO2)
[আরও দেখুনঃ তড়িৎ রসায়ন অধ্যায়ের M.C.Q. প্রশ্ম ও তার উত্তর ]
9.তড়িদবিশ্লেষন পদ্ধতিতে আলুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশনে ক্রায়োলাইট ও ফ্লওস্পারের ভূমিকা লেখো।
উঃ- বিশুদ্ধ গলিত অ্যালুমিনা (Al2O3) তড়িতের কুপরিবাহী এবং এর গলনাঙ্কও অত্যন্ত বেশি। এই কারনে Al2O3 এর সঙ্গে ক্রায়োলাইট (Na3AlF6), এবং ফ্লওস্পারের(CaF2) যোগ করা হয়। ফলে এটি তড়িতের সুপরিবাহী হয় ও গলনাঙ্ক হ্রাস পায়।
বিশুদ্ধ অ্যালুমিনা, ক্রায়োলাইট ও ফ্লওস্পারের এর মিশ্রণের তড়িদবিশ্লেষনের মাধ্যমে আলুমিনিয়াম নিষ্কাশনের পদ্ধতিকে হল- হেঁরো পদ্ধতি বলে।
10.পোলিং কী? অ্যালুমিনা (Al2O3) থেকে আলুমিনিয়াম নিষ্কাশনে কার্বন–বিজারন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না কেন?
উঃ- যেসব ধাতুর মধ্যে তাদের নিজ অক্সাইড জনিত অশুদ্ধি থাকে তাদের গলিত এবং উত্তপ্ত অবস্থায় কাঁচা কাঠের দন্ড দিয়ে নাড়ালে যে গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বন তৈরী হয় তা দিয়ে অশুদ্ধিরূপে উপস্থিত অক্সাইডকে বিজারিত করে বিশুদ্ধ ধাতুতে পরিণত করে, এই পদ্ধতিকে পোলিং বলে।
আলুমিনিয়াম একটি উচ্চ তড়িৎ ধনাত্মক ধাতু। তাই এর অক্সিজেনের প্রতি আসক্তি আছে। ফলে Al2O3 একটি অত্যন্ত সুস্থিত যৌগ। তাই এটিকে উচ্চ উষ্ণতাতেও কার্বন দ্বারা বিজারিত করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া অতি উচ্চ উষ্ণতায় আলুমিনিয়াম, কার্বনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে Al4C3 উৎপন্ন করে।
11.খনিজমল ও ধাতুমলের পার্থক্য লেখো।
উঃ-
খনিজমল | ধাতুমল |
1.কোনো ধাতুর খনিজ তথা আকরিকের মধ্যে প্রয়োজনীয় ধাতব পদার্থের সঙ্গে অনেক অপ্রয়োজনীয় বস্তু যথা- বালি, মাটি, পাথর এবং অন্য মৌলের যৌগ মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এদের খনিজমল বলে। | 1.ধাতু নিষ্কাশনের সময় বিগলন প্রক্রিয়ায় আকরিকের মধ্যে উপস্থিত খনিজ মল বা অপদ্রব্যসমূহ বিগালকের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নিম্ন গলনাঙ্ক যুক্ত হালকা গলিত পদার্থ উৎপন্ন করে। একে ধাতু মল বলে। |
2.খনিজমল অম্লধর্মী ও ক্ষারধর্মী হতে পারে। | 2.ধাতু মল সর্বদা লবণ হয়। |
12. ধাতু নিষ্কাশনের স্বতঃ বিজারণ পদ্ধতিটি লেখো।
উঃ- ধাতুর সালফাইড আকরিক সমূহ, যেমন Cu2S, PbS কে প্রথমে নিয়ন্ত্রিত বায়ুপ্রবাহে তাপজারিত করে আংশিক ভাবে ধাতব অক্সাইডে পরিণত করা হয়। তাপজারনের সময় অনেক ক্ষেত্রে সালফাইড আকরিকটি ধাতব অক্সাইড ও ধাতব সালফেটে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে অবশিষ্ট ধাতব সালফাইড, ধাতব অক্সাইড এবং ধাতব সালফেটের একটি মিশ্রন উৎপন্ন হয়। মিশ্রণটির মধ্যে কোনো বিজারক দ্রব্য যোগ না করে উচ্চ উষ্ণতায় বিগলিত করলে ধাতব অক্সাইড ও ধাতব সালফেট অপরিবর্তিত সালফাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতু উৎপন্ন করে। কোনো বিজারক দ্রব্য ছাড়াই অপরিবর্তিত সালফাইড আকরিক নিজেই বিজারকের কাজ করে বলে একে স্বতঃ বিজারণ পদ্ধতি বলে। উদাহরণ- কপার গ্লান্স (Cu2S) থেকে কপার নিষ্কাশন।
2Cu2S+3O2=2Cu2O+2SO2 , Cu2S+2Cu2O=6Cu+SO2
13. কপার ধাতু নিষ্কাশনে কোনো বিজারকের প্রয়োজন হয় না কেন? খনিজমল কাকে বলে?
উঃ- কপার ধাতুর আকরিক থেকে কপার নিষ্কাশনে প্রথমে আকরিকে তাপজারিত করা হয়। এই তাপজারিত আকরিক থেকে বিগলন প্রক্রিয়ায় ম্যাট প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে গলিত ম্যাটকে বেসিমার কনভার্টারে নিয়ন্ত্রিত বায়ুপ্রবাহে জারিত করা হয়, ফলে ম্যাটে উপস্থিত ফেরাস সালফাইড(FeS) জারিত হয়ে ফেরাস অক্সাইডে (FeO) এবং কিউপ্রাস সালফাইড (Cu2S) আংশিক জারিত হয়ে কিউপ্রাস অক্সাইডে (Cu2O) পরিণত হয়। আংশিক জারণের ফলে উৎপন্ন Cu2O ও অপরিবর্তিত Cu2S এর পারস্পরিক বিক্রিয়ায় স্বতঃ বিজারণ পদ্ধতিতে ধাতব কপার উৎপন্ন হয়। ফলে বাইরে থেকে কোনো বিজারক দ্রব্য যোগ করার প্রয়োজন হয় না।
কোনো ধাতুর খনিজ তথা আকরিকের মধ্যে প্রয়োজনীয় ধাতব পদার্থের সঙ্গে অনেক অপ্রয়োজনীয় বস্তু যথা- বালি, মাটি, পাথর এবং অন্য মৌলের যৌগ মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এদের খনিজমল বলে।
14. স্বতঃ বিজারণ পদ্ধতিতে কপার পাইরাইটস থেকে কপার নিষ্কাশনের প্রতিক্ষেত্রে সমীকরণ সহ বিক্রিয়া গুলি লেখো।
উঃ- কপার পাইরাইটস থেকে কপার নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলি হল- 1) তাপজারণ, 2) বিগলন, 3) স্বতঃ বিজারণ
তাপজারণ প্রক্রিয়ায় সংঘটিত বিক্রিয়াসমূহঃ-
Cu2S.Fe2S3+O2=Cu2S+2FeS+SO2 ; Cu2S.Fe2S3+4O2=Cu2S+2FeO+3SO2
বিগলন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত বিক্রিয়াসমূহঃ-
2FeS+3O2=2FeO+2SO2; FeO+SiO2=FeSiO3
স্বতঃ বিজারণ প্রক্রিয়ায় সংঘটিত বিক্রিয়াসমূহঃ-
2Cu2S+3O2=2Cu2O+2SO2; Cu2S+2O2=Cu2SO4
Cu2S+2Cu2O=6Cu+SO2; Cu2S+Cu2SO4=4Cu+2SO2
15.জিঙ্ক ব্লেন্ড আকরিককে কার্বন বিজারণের আগে তাপজারিত করা হয় কেন? ম্যালাকাইট কী? এর সংকেত লেখো।
উঃ- জিঙ্ক ব্লেন্ড আকরিককে কার্বন বিজারণের আগে তাপজারিত করলে আকরিক মধ্যস্থ সমস্ত জিঙ্ক সালফাইড, জিঙ্ক অক্সাইডে জারিত হয়।
2ZnS+3O2=2ZnO+2SO2
ম্যালাকাইট হল কপারের একটি আকরিক। সংকেত [CuCO3.Cu(OH)2]
16. কপারের দুটি আকরিকের নাম লেখো। অ্যানোড মাড বা অ্যানোড কাদা কী?
উঃ- কপার পাইরাইটিস (Cu2S.Fe2S3), চালকোসাইট(Cu2S)
অশুদ্ধ কপার থেকে তড়িৎ বিশোধন প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ কপার প্রস্ততির সময় বিশুদ্ধ কপার এর পাতলা পাতকে ক্যাথোড ও অশুদ্ধ কপার এর মোটা পাতকে অ্যানোড রূপে ব্যবহার করে লঘু H2SO4 মিশ্রিত CuSO4 দ্রবণের তড়িদবিশ্লেষন করা হয়। এর ফলে বিশুদ্ধ কপার ক্যাথোডে জমা হয় এবং অ্যানোডে অশুদ্ধ কপার ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তড়িদবিশ্লেষনের সময় সাধারণত অশুদ্ধ কপার অ্যানোডেকে মসলিনের থলিতে রাখা হয়। অশুদ্ধ কপারে থাকা গোল্ড, সিলভার, প্ল্যাটিনাম ধাতুগুলি কাদার মতো ওই থলিতে জমা হয়। একে অ্যানোড মাড বলে।
17. পাইরোমেটালার্জি বলতে কি বোঝো। ভালো বিজারক দ্রব্য হওয়া সত্বেও ধাতু বিদ্যায় বিজারক দ্রব্য রূপে H2 ব্যবহার করা হয় না কেন?
উঃ- H2 দ্বারা ধাতব অক্সাইডের বিজারণে H2 , H2O তে পরিণত হয়। যেহেতু গ্যাস থেকে তরল উৎপন্ন হয়, তাই এই বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এনট্রপির পরিবর্তন হ্রাস পায়।
MO(s) + H2(g) = M(s) + H2O(l)
ফলে △S= -ve হয় এবং △G এর মান বৃদ্ধি পায়। সুতরাং তাপগতিবিদ্যাগত ভাবে বিক্রিয়াটির সম্ভাব্যপরতা হ্রাস পায়। এছাড়া ধাতব হাইড্রাইড গঠন এবং ধাতুতে হাইড্রোজেন দ্রবীভবন, H2 এর বিজারণ ধর্মকে হ্রাস করে।
18. ম্যাট কী? ম্যাট থেকে ব্লিস্টার কপার প্রস্তুতির বিক্রিয়া গুলি লেখো।
উঃ- কিউপ্রাস সালফাইড(Cu2S) ও ফেরাস সালফাইড (FeS) এর গলিত মিশ্রণকে ম্যাট বলে।
2FeS+3O2=2FeO+2SO2; FeO+SiO2=FeSiO3
2Cu2S+3O2=2Cu2O+2SO2 , Cu2S+2Cu2O=6Cu+SO2
19. জোন পরিশোধনের নীতিটিলেখো। আয়রন নিষ্কাশনে চুনাপাথরের ভূমিকা কী?
উঃ- ধাতুতে উপস্থিত অশুদ্ধিগুলি কঠিন ধাতু অপেক্ষা গলিত ধাতুতে অধিক দ্রাব্য। তাই গলিত ধাতুকে ঠাণ্ডা করলে বিশুদ্ধ ধাতু কেলাসিত হয় এবং অশুদ্ধিগুলি ধাতুর গলিত অংশে দ্রবীভূত থাকে।
মারুৎ চুল্লিতে আয়রন নিষ্কাশনের সময় চুনাপাথর (CaCO3) বিয়োজিত হয়ে চুন(CaO) এবং CO2 উৎপন্ন করে। উৎপন্ন চুন বিগালক হিসাবে কাজ করে এবং অপদ্রব্য রূপে উপস্থিত সিলিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যালসিয়াম সিলিকেট (CaSiO3) নামক ধাতুমল উৎপন্ন করে।
20. ফেনা-ভাসন পদ্ধিতিতে প্রধানত কি কি পদার্থ ব্যবহৃত হয়? এই পদ্ধিতিতে ব্যবহৃত পাইন তেল ও সোডিয়াম জ্যানথেটের ভূমিকা কী?
উঃ- ফেনা-ভাসন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত পদার্থঃ ১) গ্রাহক রূপে ফ্যাটি অ্যাসিড, পাইন তেল এবং সোডিয়াম ও পটাশিয়াম ইথাইল জ্যানথেটের মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়। ২) ফেনা-সুস্থিতিকারক রূপে ক্রেসলসমূহ ও অ্যানিলিনের মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়।
পাইন তেল ও সোডিয়াম জ্যানথেটের ভূমিকাঃ ফেনা-ভাসন পদ্ধতিতে- ১) পাইন তেল ফেনা উতপাদনকারী পদার্থের ভূমিকা পালন করে। ২) ধাতব যৌগটিকে ধরার জন্য গ্রাহক হিসেবে সোডিয়াম জ্যানথেট ব্যবহৃত হয়। জ্যানথেট অণুর সালফারযুক্ত প্রান্তটি আকরিকের ধাতুটির দিকে আকৃষ্ট হয় এবং হাইড্রোকার্বন তথা লায়োফোবিক প্রান্ত জলকে পরিহার করার চেষ্টা করে। ফলসরূপ আকরিকে ধাতুর কণাগুলি ফেনার সঙ্গে ভেসে ওঠে।
21. মণ্ড পদ্ধতিতে কীভাবে ধাতুকে পরিশোধন করা হয়?
উঃ- মণ্ড পদ্ধতিতে নিকেল (Ni) ধাতুকে পরিশোধন করা হয়। 60oC তাপমাত্রায় অবিশুদ্ধ নিকেল ধাতুকে CO এর সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে উদবায়ী নিকেল টেট্রাকার্বনিল যৌগ [Ni(CO)4] প্রস্তুত করা হয়। পরে উচ্চ তাপমাত্রায় [Ni(CO)4] যৌগটির বিয়োজন ঘটিয়ে বিশুদ্ধ ধাতব নিকেল এবং CO গ্যাস উৎপন্ন করা হয়।
Ni\;(অবিশুদ্ধ)+CO\xrightarrow[]{60^oC}[Ni(CO)_4]\xrightarrow[]{\Delta}Ni\;(বিশুদ্ধ)+4CO
22. লিচিং কী ? উদাহরন দাও।
উঃ- আকরিককে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্যে উপযুক্ত বিকারকে দ্রবীভূত করে অদ্রবীভূত খণিজমল থেকে পৃথক করার পদ্ধতিতে লিচিং বলে। চূর্ণীকৃত গোল্ড আকরিকের সঙ্গে NaCN বা KCN এর 0.5% দ্রবন যোগ করে মিশ্রণে বায়ু চালনা করা হয়। গোল্ড জারিত হয়ে CN– আয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দ্রাব্য সায়ানাইড কমপ্লেক্স গঠন করে। ফিলটার করে গোল্ড এর কমপ্লেক্স পৃথক করা হয়, যা জিঙ্কের সাথে বিক্রিয়ায় বিশুদ্ধ গোল্ড উৎপন্ন করে।
4Au (অবিশুদ্ধ) 8KCN + 2H2O + O2 = 4K[Au(CN)2] (দ্রাব্য কমপ্লেক্স) + 4KOH
2K[Au(CN)2] + Zn = K2[Zn(CN)4] + 2Au (বিশুদ্ধ)
23. বায়ার পদ্ধতিতে কীভাবে বক্সাইট থেকে বিশুদ্ধ অ্যালুমিনা তৈরি করা হয়?
উঃ- অ্যালিমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশনে লিচিং প্রক্রিয়ায় বক্সাইট আকরিককে গাঢ়ীকৃত করা হয়। বক্সাইটের মধ্যে সিলিকা, আয়রন অক্সাইড এবং টাইটেনিয়াম অক্সাইড অশুদ্ধি হিসেবে থাকে। এই সমস্ত অশুদ্ধিগুলিকে দূর করার জন্য 35-36 bar চাপে 473-523K উষ্ণতায় বক্সাইটকে গাঢ় সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড দ্রবন (45%) সহযোগে উত্তপ্ত করা হয়।
Al2O3 + 2NaOH + 2H2O = 2Na[Al(OH)4]
দ্রবণটি ফিলটার করে পরিস্রুতের মধ্যে CO2 গ্যাস চালনা করলে সোডিয়াম মেটা- অ্যালুমিনেট প্রশমিত হয়ে সোদক Al2O3 অধঃক্ষিপ্ত হয়।
2Na[Al(OH)4] + 2CO2 = Al2O3 . x H2O + 2NaHCO3
সোদক অ্যালুমিনাকে ফিলটার করে ছেঁকে শুকনো করে উত্তপ্ত করলে বিশুদ্ধ অ্যালুমিনা উৎপন্ন হয়।
Al2O3 . x H2O =Al2O3 (s) + x H2O
24. আয়রন নিষ্কাশনে ক্ষারীয় বিগালক ও কপার নিষ্কাশনে আম্লিক বিগালক ব্যবহার করা হয় কেন?
উঃ- আয়রনের আকরিকে খণিজমল হিসেবে মিশ্রিত সিলিকা (SiO2) একটি আম্লিক অক্সাইড,যা অপসারিত করার জন্য ক্ষারীয় বিগালক, CaO এর প্রয়োজন হয়।
SiO2 (খনিজমল) + CaO (ক্ষারীয় বিগালক) ⟶ CaSiO3 (ধাতুমল)
অপরদিকে কপারের আকরিকে খনিজমল হিসেবে মিশ্রিত ক্ষারীয় অক্সাইড (FeO) মিশ্রিত থাকে। তাই এর অপসারণের জন্য আম্লিক বিগালক SiO2 এর প্রয়োজন।
FeO (খনিজমল) + SiO2 (আম্লিক বিগালক) ⟶ FeSiO3 (ধাতুমল)
25. ZnS থেকে Zn ধাতু নিষ্কাশনে রাসায়নিক বিক্রিয়া গুলি লেখো।
উঃ- জিঙ্ক ব্লেণ্ড থেকে জিঙ্ক নিষ্কাশনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া গুলি নিচে দেওয়া হল-
১) গাঢ়ীকরনঃ ফেনা-ভাসন পদ্ধতিতে জিঙ্ক ব্লেণ্ড (ZnS) আকরিকে উপস্থিত অশুদ্ধিগুলি (PbS, CdS, বালি, মাটি ) কে অপসারিত করা হয়।
২) তাপজারণঃ হেরেসেফ চুল্লিতে নিয়ন্ত্রিতভাবে উত্তপ্ত বায়ু চালনা করে 800-900oC তাপমাত্রার মধ্যে আকরিকের তাপজারণ সম্পন্ন করা হয়।
2ZnS + 3O2 ⟶ 2ZnO + 2SO2 ↑
তাপজারিত আকরিকের বিজারণঃ তাপজারিত আকরিকের সঙ্গে অতিরিক্ত কোক-চূর্ণ মিশিয়ে জিংক অক্সাইডের বিজারণের মাধ্যমে জিংক ধাতু নিষ্কাশন করা হয়।
ZnS + C ⟶ Zn + CO2 ↑
বিশ্লেষনঃ উৎপন্ন জিংকে Cd, Si, As, Fe, Pb ইত্যাদি অশুদ্ধি থাকে। এই অশুদ্ধিযুক্ত জিংককে স্পেলটার বলে। স্পেলটার কে পাতন বা তড়িৎ- বিশোধন পদ্ধিতি দ্বারা পরিশোধিত করে বিশুদ্ধ জিংক পাওয়া যায়।
কিছু সংকর ধাতুর নাম, সংযুক্তি এবং তার ব্যবহার।
সংকর ধাতু | সংযুক্তি | ব্যবহার |
ডুরালুমিন | Al- 95%, Cu- 4%, Mg- .5%, Mn- .5% | বিমান,মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ, প্রেসার কুকার ইত্যাদি তৈরি করতে ব্যবহার হয়। |
ব্রাস বা পিতল | Cu-60%, Zn-40% | বাসনপত্র, মূর্তি তৈরি করতে ব্যবহার হয়। |
জার্মান সিলভার | Cu-25-30%, Zn-25-30%, Ni-40-50% | বাসনপত্র, গয়না, ফুলদানি তৈরিতে ব্যবহার হয়। |
বেল মেটাল বা কাঁসা | Cu-80%, Sn-20% | বাসনপত্র, মূর্তি, মুদ্রা তৈরিতে ব্যবহার হয়। |
মোনেল মেটাল | Cu-30%, Ni-67%, Fe,Mn-3% | বয়লার, অ্যাসিড পাত্র রাসায়নিক কাজে ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহার হয়। |
স্টেইনলেস স্টিল | Fe-73%, Cr-18%, Ni-8%, C-1% | বাসনপত্র, মূর্তি তৈরি করতে ব্যবহার হয়। |
ইনভার | Fe-64%, Ni-36% | পরিমাপ করার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ঘড়ি, প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। |
মিশচমেটাল | Fe-30%, Ce-70% | সিগারেট লাইটারে ও গ্যাস বা পেট্রোল ভেপার লাইটারে এটি ব্যবহার করা হয়। |
☑️ Also read :- দ্বাদশ শ্রেণীর প্রথম অধ্যায় পদার্থের কঠিন অবস্থা |
☑️ Also read :- দ্বাদশ শ্রেণীর রসায়ন বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়- দ্রবন |
☑️ Also read :- দ্বাদশ শ্রেণীর প্রত্যহিক জীবনে রসায়ন অধ্যায়ের প্রশ্ম-উত্তর│
☑️ Also read :- পৃষ্ঠতলীয় রসায়ন অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ M. C. Q. এবং তার উত্তর।
আমাদের পোস্টের গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে আমাদের Facebook Page ফলো করুন এবং Telegram চ্যানেল জয়েন করুন।