Last Updated on March 19, 2022 by Science Master
গ্রুপ-১৪ মৌলসমূহ (কার্বন পরিবার) : Group-14 elements
গ্রুপ-১৪ এর অন্তর্গত মৌলসমূহ (Group-14 elements) হল- কার্বন (C), সিলিকন (Si), জার্মেনিয়াম (Ge), টিন (Sn), লেড (Pb), ফ্লোরোডিয়াম (FI)।
1.টিন ও লেডের প্রধান খনিজের নাম লেখো।
উঃ- টিনের প্রধান খনিজ হল টিনস্টোন (SnO2) এবং লেডের প্রধান খনিজ হল গ্যালেনা (PbS)।
2. CCl4 আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়, কিন্তু SnCl4 হয় না কেন?
উঃ- কারন কার্বনের কোনো d- অর্বিট্যাল নেই।
3. হীরক তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী নয় কেন?
উঃ- হীরকের কেলাসে প্রতিটি কার্বন পরমানুর চারটি যোজক ইলেকট্রনই সমযোজী বন্ধন গঠনে অংশ গ্রহণ করে বলে হীরকের মধ্যে কোনো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না, তাই হীরক তাপ ও তড়িতের পরিবহণ করতে পারে না।
4. বহুরূপতা কাকে বলে?
উঃ- কোনো কোনো মৌলিক পদার্থ নিজের মূল রাসায়নিক ধর্ম অক্ষুণ্ণ রেখে বিভিন্ন রূপে অবস্থান করতে পারে। মৌলের এই বিভিন্ন রূপ ধরনের এই বিশেষ ধর্মকে বহুরূপতা বলে।
5. PbI4 এর অস্তিত্ব নেই কেন?
উঃ- কারন Pb একটি শক্তিশালী জারক পদার্থ এবং I– একটি শক্তিশালী বিজারক পদার্থ।
6. গ্রাফাইটকে কীভাবে শনাক্ত করবে?
উঃ- সামান্য KClO4 মিশ্রিত HNO3 ও H2SO4 সহ গ্রাফাইটকে উত্তপ্ত করলে সবুজাভ হলুদ বর্ণের কঠিন গ্রাফাইটিক অ্যাসিড (C11H4O5) উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ার দ্বারা গ্রাফাইটকে শনাক্ত করা যায়। হীরক অনুরুপ বিক্রিয়া দেয় না।
7. কার্বনের কোন রূপভেদটি পারমাণবিক চুল্লিতে মডারেটর হিসেবে ব্যবহার করা হয়?
উঃ- গ্রাফাইট।
8. ফুলারিন কি?
উঃ- কার্বনের একটি নিয়তাকার রূপভেদ। যার অণুর গঠন C60 ।
9. দুটি কঠিন পদার্থের মিশ্রণে তরল পদার্থ উৎপন্ন হওয়ার উদাহরন দাও।
উঃ- দুটি কঠিন পদার্থ কার্বন এবং সালফার এর সংযোগে উৎপন্ন CS2 একটি তরল পদার্থ।
10. কার্বোরাণ্ডাম কি? এর ব্যবহার লেখো।
উঃ- সিলিকা ও কোক চূর্ণের মিশ্রণ বৈদ্যুতিক চুল্লিতে 1500-2000o C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে সিলিকন কার্বাইড (SiC) উৎপন্ন হয়। এটি কালো, উজ্জ্বল ও খুব কঠিন পদার্থ। একে কার্বোরাণ্ডাম বলে। এটি ধাতু পালিশ করার কাজে ব্যবহার করা হয়।
SiO2 + 3C ➝ SiC + 2CO
11. ওয়াটার গ্যাস কি?
উঃ- শ্বেত তপ্ত কোকের ওপর দিয়ে স্টীম চালনা করলে সমআয়তন হাইড্রোজেন ও কার্বন-মনো-অক্সাইড এর মিশ্রণ উৎপন্ন হয়। এই মিশ্রণকে ওয়াটার গ্যাস বলে।
C + H2 ➝ [H2+CO] (ওয়াটার গ্যাস)
12. ভূসাকালি বা ঝুল কী? এর ব্যবহার লেখো।
উঃ- কেরোসিন, পেট্রোল, বেঞ্জিন প্রভৃতি জৈব পদার্থকে নিয়ন্ত্রিত বায়ুতে দহন করলে এরা একপ্রকার কালো ধোঁয়াসহ জ্বলে। এই ধোঁয়াকে শীতল পাত্রে ঘনীভূত করলে ঝুলের সৃষ্টি হয়। একেই ভূসাকালি বা ঝুল বলে।
ছাপার কালি, জুতোর কালি, কালো রং প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
12. CO একটি বিষাক্ত গ্যাস- ব্যাখ্যা করো।
উঃ- CO অণু (–C 𝄘 O+) কার্বনের নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড়ের সাহায্যে রক্তের হিমোগ্লোবিনে উপস্থিত Fe পরমানুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অতি সুস্থিত জটিল যৌগ কার্বক্সিহিমোগ্লোবিন গঠন করে। ফলে অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না । ফলে হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের বহন ক্ষমতা হারায় এবং শরীর শিথিল হয়ে পড়ে ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
13. অ্যামোনিয়া যুক্ত AgNO3 দ্রবনে CO গ্যাস চালনা করলে কী ঘটবে।
উঃ- অ্যামোনিয়া যুক্ত AgNO3 দ্রবনে CO গ্যাস চালনা করলে দ্রবণটি বাদামি বর্ণ ধারন করে।
2AgNO3 + 4NH3 + 2H2O + CO ➝ 2Ag (বাদামি) + 2NH4NO3 + (NH4)2CO3
14. অ্যামোনিয়া যুক্ত Cu2Cl2 দ্রবনে CO গ্যাস চালনা করলে কী ঘটবে।
উঃ- অ্যামোনিয়া যুক্ত Cu2Cl2 দ্রবণের মধ্য দিয়ে CO গ্যাস চালনা করলে CO শোষিত হয়ে একটি সাদা কেলাসাকার যুতযৌগ উৎপন্ন করে।
Cu2Cl2 + 2CO + 4H2O ➝ 2[CuCl.CO.2H2O]
15. স্বচ্ছ চুন জলের মধ্যে দিয়ে CO2 গ্যাস চালনা করলে কি ঘটবে।
উঃ- স্বচ্ছ চুন জলের মধ্যে দিয়ে CO2 গ্যাস চালনা করলে CaCO3 অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়। ফলে চুন জল ঘোলা হয়ে যায়।
Ca(OH)2 + CO2 ➝ CaCO3 + H2O
16. মার্বেল থেকে CO2 প্রস্তুত করার সময় লঘু H2SO4 ব্যবহার করা হয় না কেন?
উঃ- CaCO3 এবং লঘু H2SO4 এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন CaSO4 মার্বেল পাথরের ওপরে আস্তরন সৃষ্টি করে। ফলে H2SO4 আর মার্বেল পাথরের সংস্পর্শে আসতে পারে না। তাই প্রথমে কিছুটা CO2 উৎপন্ন হলেও পরে CO2 উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
CaCO3 + H2SO4 ➝ CaSO4 + CO2 + H2O
17. CO এবং CO2 এর মিশ্রণ থেকে কীভাবে গ্যাস দুটিকে পৃথক করবে?
উঃ- CO এবং CO2 এর মিশ্রণকে HCl মিশ্রিত Cu2Cl2 দ্রবণের মধ্য দিয়ে চালনা করলে CO ওই দ্রবণে শোষিত হয়। CO2 বিক্রিয়া না করে বেরিয়ে যায়। প্রাপ্ত দ্রবণকে উত্তপ্ত করলে CO নির্গত হয় এবং একে সংগ্রহ করা হয়।
2CO + Cu2Cl2 + H2O ➝ 2[CuCl.CO.2H2O]
2[CuCl.CO.2H2O] ➝ Cu2Cl2 + 2CO + 4H2O
18. অ্যাকোয়া ড্যাগ এবং অয়েল ড্যাগ কী?
উঃ- জলে গ্রাফাইটের জলীয় দ্রবণকে অ্যাকোয়া ড্যাগ এবং তেলে গ্রাফাইটের কোলয়ডীয় দ্রবণকে অয়েল ড্যাগ বলে। এগুলি পিচ্ছিলকারক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
19. CO একটি দাহ্য গ্যাস কিন্তু CO2 দাহ্য নয় কেন?
উঃ- CO এবং CO2 এর জারণ অবস্থা যথাক্রমে +2 এবং +4। কোনো যৌগে কার্বনের সর্বোচ্চ জারণ +4। ফলে CO এর কার্বন পরমানুর জারণ সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা আছে; অর্থাৎ CO এর জারিত হওয়ার প্রবণতা আছে। এই কারনে CO অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়, অর্থাৎ এটি দাহ্য গ্যাস ।
2CO + O2 ➝ 2CO2
CO2 তে কার্বন পরমানু তার সর্বোচ্চ জারণ অবস্থায় আছে বলে এর জারিত হওয়ার প্রবণতা নেই। এই কারনে CO2 দাহ্য গ্যাস নয়।
20. CO যুত যৌগ গঠন করে কেন?
উঃ- কার্বন- ম্নো-অক্সাইড অণুর কার্বন পরমানুতে একটি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় থাকে। এই নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় দান করে CO কয়েকটি অধাতব ও ধাতব মৌলের সঙ্গে যুত যৌগ গঠন করে।
CO + Cl2 ➝ COCl2
21. কয়লার উনুনে নীল শিখা দেখা যায় কেন?
উঃ- কয়লার উনুনের নীচের দিকে অতিরিক্ত বায়ু ও কার্বনের বিক্রিয়ায় CO2 উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন CO2 ওপরের দিকে যাওয়ার সময় উনুনের মধ্যবর্তী অংশে লোহিত তপ্ত কার্বন দ্বারা CO তে বিজারিত হয়। এই CO উনুনের ওপরে উন্মুক্ত বাতাসে নীল শিখাসহ জ্বলে CO2 তে পরিণত হয়। এই কারনে কয়লার উনুনে নীল শিখা দেখা যায়।
উনুনের নীচে,
C + O2 ➝ CO2
উনুনের মাঝখানে,
CO2 + C ➝ 2CO
উনুনের ওপরে,
2CO + O2 ➝ 2CO2
22. CO2 গ্যাসীয় পদার্থ কিন্তু SiO2 কঠিন পদার্থ – ব্যাখ্যা করো।
উঃ- CO2 অণুর C এবং O পরমানুর আকার প্রায় সমান। তাই অণুগুলির অধ্রুবীয় হয় এবং অণুগুলির মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষন বল খুব কম হয়। কিন্তু SiO2 অণু গুলির প্রতিটি Si পরমানু 4 টি O পরমানুর সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং প্রতিটি O পরমানুর সঙ্গে দুটি Si পরমানু যুক্ত থাকে। ফলে একটি অতিকায় অণু গঠন করে।
23. 200o C উষ্ণতায় উচ্চচাপে কষ্টিক সোডা দ্রবনে CO গ্যাস চালনা করা হল এবং উৎপন্ন পদার্থকে 360o C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করা হল।
উঃ- 200o C উষ্ণতায় উচ্চচাপে কষ্টিক সোডা দ্রবনে অতিরিক্ত পরিমান CO গ্যাস চালনা করলে সোডিয়াম ফর্মেট উৎপন্ন হয়।
NaOH + CO ➝ HCOONa
উৎপন্ন সোডিয়াম ফর্মেটকে 360o C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে এটি সোডিয়াম অক্সালেট উৎপন্ন করে এবং সেই সবগে হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়।
2HCOONa ➝ NaCOO-COONa + H2
24. শর্তসহ ইউরিয়া উৎপাদনের রাসায়নিক সমীকরণ দাও।
উঃ- 200-210oC উষ্ণতায় 150 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে CO2 অ্যামোনিয়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করে ইউরিয়া উৎপন্ন করে।
CO2 + 2NH3 ⥨ CO(NH2)2 + H2O
25. জিওলাইট কাকে বলে ?
উঃ- সোডিয়ামের অ্যালুমিনোসিলিকেট লবণের কেলাসকে জিওলাইট বলে। এর রাসায়নিক সংকেত [NaAlSiO6.H2O]
26. সিলিকোন কাদের বলে?
উঃ- সিলিকোন হল সাংশ্লেষিক অর্গ্যানোসিলিকোন যৌগ যাতে R2SiO এককের পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং এগুলি Si – O – Si লিংকেজের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।