Class 7 Poribesh Chapter 7: সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ের সপ্তম অধ্যায় ‘পরিবেশের সংকট উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ’ থেকে সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর করে দেওয়া হলো। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছো তারা তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ের সপ্তম অধ্যায়ের (Class 7 Poribesh Chapter 7) এই প্রশ্ন উত্তরগুলি প্র্যাকটিস করে নিতে পারো। বিভিন্ন প্রশ্ন বিচিত্রা থেকে সংগ্রহ করে প্রশ্নগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং যথাযথ সুন্দরভাবে উত্তর লিখে দেওয়া হয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ বিজ্ঞান (Class 7 Poribesh O Bigyan Chapter 7) বিষয়ের সপ্তম অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর নিচে দেওয়া হল।
পরিবেশের সংকট উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ (Class 7 Poribesh Chapter 7)
সঠিক উত্তর নির্বাচন করে লেখ।
(1) NASA এর গবেষণা অনুযায়ী গত এক শতাব্দীর মধ্যে উষ্ণতম বছর হল- (a) 2004 (b) 2005 (c) 2006 (d) 2007
উঃ – (b) 2005
(2) বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যত সংখ্যক প্রজাতি ধ্বংসের মুখে রয়েছে তার সংখ্যা হল- (a) 1500 (b) 10500 (c) 15000 (d) 15500
উঃ – (d) 15500
(3) একটি পরিনত ম্যানগ্রোভ গাছ বছরে প্রতি এক হেক্টর জমিতে সোডিয়াম সরবরাহ করে- (a) 26 কেজি (b) 34 কেজি (c) 47 কেজি (d) 32 কেজি।
উঃ – (d) 32 কেজি।
(4) আম গাছে মুকুল আসে- (a) গ্রীষ্মকালে (b) শীতকালে (c) বর্ষাকালে (d) হেমন্তকালে
উঃ – (b) শীতকালে।
(5) 1980-88 সালের মধ্যে ভারতে কয়টি দ্বাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটেছে- (a) 11 টি (b) 15 টি (c) 14 টি (d) 18 টি
উঃ – (d) 18 টি
(6) পর্ণমোচী ও ম্যানগ্রোভ অরণ্যে কোন প্রাণী বাস করে? (a) চিতা (b) বাঘ (c) গন্ডার (d) লেমুর
উঃ – বাঘ।
(7) প্রবাল বা কোরাল কোন পর্বভুক্ত প্রাণী? (a) পরিফেরা (b) নিডারিয়া (c) মোলাস্কা (d) আর্থ্রোপোডা
উঃ – (b) নিডারিয়া।
(8) উত্তরাখণ্ডে কত সালে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি থেকে বিধ্বংসী বন্যা হয়েছিল? (a) 2011 (b) 2009 (c) 2013 (d) 2015
উঃ – (c) 2013
(9) ভারতের আন্দামান-নিকোবর অঞ্চল কোন বায়োডাইভারসিটি হটস্পট এর অন্তর্ভুক্ত? (a) সুন্দাল্যান্ড (b) পূর্ব হিমালয় (c) ইন্দো-বার্মা (d) শ্রীলঙ্কা
উঃ – (a) সুন্দাল্যান্ড।
(10) সাইবেরিয়ার বাঘের অস্তিত্ব সংকটের প্রধান কারণ হলো- (a) খাদ্যের অভাব (b) রোগ সংক্রমণ (c) বাসস্থান ধ্বংস হওয়া (d) প্রজননে অসুবিধা।
উঃ – (c) বাসস্থান ধ্বংস হওয়া ।
(11) তেলাপিয়া মাছ আমাদের দেশে এসেছিল কোন দেশ থেকে? (a) চীন (b) জাপান (c) আফ্রিকা (d) আমেরিকা।
উঃ – (c) আফ্রিকা।
(12) সিকিম কোন বায়োডাইভারসিটি হটস্পট এর অন্তর্গত?
(a) পূর্ব হিমালয় (b) ইন্দো বার্মা (c) পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং শ্রীলংকা (d) সুন্দাল্যান্ড
উঃ – (a) পূর্ব হিমালয়।
(13) অতি জীববৈচিত্র্যশালী দেশ হল- (a) ব্রাজিল (b) ইকুয়েডর (c) মাদাগাস্কার (d) সবকটিই।
উঃ – সবকটিই।
(14) বনভূমির খাদ্য শৃঙ্খলে সবুজ উদ্ভিদ হল-
(a) প্রাথমিক খাদক (b) উৎপাদক (c) গৌণ খাদক (d) বিয়োজক।
উঃ – (b) উৎপাদক।
(15) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কোন হটস্পটের অন্তর্গত?
(a) পূর্ব হিমালয় (b) ইন্দো বার্মা (c) পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং শ্রীলংকা (d) সুন্দাল্যান্ড
উঃ – (d) সুন্দাল্যান্ড।
আরও দেখুন: সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ের সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্ম-উত্তর একসঙ্গে পেতে এখানে ক্লিক করুন।
নিচের প্রশ্নগুলির কোথায় উত্তর দাও।
(1) একটি মেগাডাইভারসিটি দেশের (Megadiversity Nation) নাম লেখো।
উঃ – ভারত।
(2) কেরলে ____ভ্যালি অবস্থিত।
উঃ – সাইলেন্ট।
(3) খাদ্য খাদকের সম্পর্ককে কি বলে?
উঃ – খাদ্যশৃঙ্খল।
(4) প্রবাল বা কোরাল কোন পর্বভুক্ত প্রাণী?
উঃ – প্রবাল বা কোরাল হল এক ধরনের সামুদ্রিক আমেরুদন্ডী প্রাণী। এরা নিডারিয়া পর্বভুক্ত।
(5) সাইবেরিয়ার বাঘের অস্তিত্ব সংকটের প্রধান কারণ কী?
উঃ – সাইবেরিয়ার বাঘের (Siberian Tiger) অস্তিত্ব সংকটের অন্যতম কারণ হলো তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
(6) হিমালয়ের ____ হল একটি প্রাণী যার থেকে মৃগনাভি পাওয়া যায়।
উঃ – কস্তুরী মৃগ (Musk Deer)।
(7) জলবায়ু কাকে বলে?
উঃ – কোনো স্থানের দীর্ঘ সময়ের (সাধারণত ৩০ বছর বা তার বেশি) গড় আবহাওয়ার অবস্থাকে জলবায়ু বলে।
(8) গ্লোবাল ওয়ার্মিং কি?
উঃ – পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ক্রমে বেড়ে যাওয়াকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।
(9) ভারতের দুটি হটস্পট এর নাম লেখ?
উঃ – সুন্দাল্যাণ্ড:- ভারতের আন্দামান-নিকোবর অঞ্চল, ইন্দো-বার্মা:- মেঘালয়, অরুনাচল প্রদেশ।
(10) হিমবাহ কত শতাংশ সূর্য রশ্মি প্রতিফলিত এবং কত শতাংশ সূর্য রশ্মি শোষণ করে?
উঃ – হিমবাহ প্রায় ৮০% শতাংশ সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত করে আর প্রায় ২০% শোষণ করে।
(11) 1993-2005 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতল প্রতিবছরে গড়ে কতটা বেড়েছে?
উঃ – প্রতি বছর গড়ে বেড়েছে 3 মিমি (0.1 ইঞ্চি)।
(12) জীববৈচিত্রের দুটি গুরুত্ব লেখো।
উঃ – জীববৈচিত্রের দুটি গুরুত্ব হল- (১) পরিবেশের দূষণ রোধ, (২) মৃত্তিকা সংরক্ষণ।
(13) বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের ____ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উঃ – উষ্ণতা।
(14) প্রবাল বা কোরাল ____ পর্বভুক্ত প্রাণী।
উঃ – নিডারিয়া।
(15) একটি অতি বৈচিত্রের দেশ হলো ____।
উঃ – ভারত।
(16) গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের বিখ্যাত প্রাণীটি হল ____।
উঃ – কচ্ছপ।
(17) বর্ষার জল নানা ঢাল বেয়ে নেমে একসঙ্গে মিলে ____ এর জন্ম দেয়।
উঃ – নদীর।
(18) মৃগনাভি কোন বিশেষ প্রাণী থেকে পাওয়া যায়?
উঃ – কস্তুরী মৃগ (Musk Deer)।
(19) খাদ্যশৃঙ্খলটি সম্পূর্ণ করো: ঘাস –> ? –> ? –> ঈগল পাখি।
উঃ – ফড়িং, সাপ।
(20) গঙ্গার শুশুক বিপন্ন হওয়ার মুখ্য কারণ কী?
উঃ – শিল্প আর কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গঙ্গায় এসে মেশে। ফলে গঙ্গায় মাছের সংখ্যা খুব কমে গেছে। আর সেই সঙ্গে বিপন্ন হচ্ছে গঙ্গার শুশুক (Gangetic Dolphin)।
(21) হিমবাহ ____ শতাংশ সূর্যরশ্মি শোষণ করে।
উঃ – 20
(22) তৃণভূমির খাদ্য শৃঙ্খলের একটি উদাহরণ দাও।
উঃ – ঘাস –> ঘাস ফড়িং –> ব্যাং –> সাপ –> ঈগল।
(23) পৃথিবীতে ____ টি অতি জীববৈচিত্রসম্পন্ন দেশ আছে।
উঃ – 17 টি।
(24) অস্ট্রেলিয়ার কোয়ালা (Koala) ভাল্লুকের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন হওয়ার কারণ কি?
উঃ – পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে অস্ট্রেলিয়ায় ইউক্যালিপটাস গাছের পাতার খাদ্যগুণ কমে যাচ্ছে। এর ফলে সমস্যায় পড়ছে অস্ট্রেলিয়ার কোয়ালা ভাল্লুক, যাদের খাবার এই ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা।
(25) একটি খাদ্য শৃংখল অন্যান্য খাদ্যশৃঙ্খলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে ____ তৈরি করে।
উঃ – খাদ্যজাল।
নিচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
(1) প্রবাল প্রাচীর কী?
উঃ – একসঙ্গে বাস করা অনেক প্রবালের দেহের বাইরে থাকা ক্যালসিয়াম কার্বনেটের বহিঃকঙ্কাল একটা শক্ত প্রাচীরের মতো গঠন তৈরি করে। এটাই হল প্রবাল প্রাচীর।
(2) পৃথিবীর জীববৈচিত্র হ্রাসের কমপক্ষে তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করো।
উঃ – পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণগুলো নিচে ব্যাখ্যাসহ দেওয়া হলো—
1. বনউজাড় ও আবাসস্থল ধ্বংস: মানুষের বসতি, কৃষি ও শিল্প স্থাপনের জন্য বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে, এবং অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
2. দূষণ: কারখানা, যানবাহন ও কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের কারণে বায়ু, জল ও মাটি দূষিত হচ্ছে। এতে জীবজগতের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে এবং অনেক প্রজাতি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে।
3. জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ গলছে, সমুদ্রের স্তর বাড়ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অনেক প্রজাতি নতুন জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
4. অতিরিক্ত শিকার ও মৎস্য আহরণ: খাদ্য, চামড়া, দাঁত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অনেক প্রাণীকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। এতে তাদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে।
5. বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ: এক অঞ্চলের প্রাণী বা উদ্ভিদ অন্য অঞ্চলে এনে ছেড়ে দেওয়া হলে তারা স্থানীয় প্রজাতির ওপর প্রভাব ফেলে। অনেক সময় স্থানীয় প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়, ফলে জীববৈচিত্র্য কমে যায়।
(3) পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা আলোচনা করো।
উঃ – পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা:
গাছ আমাদের পরিবেশের অপরিহার্য অংশ। তারা শুধু অক্সিজেন সরবরাহই করে না, বরং পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে গাছের কয়েকটি প্রধান ভূমিকা আলোচনা করা হলো—
অক্সিজেন সরবরাহ ও কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ:
গাছ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে, যা প্রাণিকুলের জীবনের জন্য অপরিহার্য।
দূষণ রোধ: গাছ বাতাসের ধুলো, ধোঁয়া ও ক্ষতিকর গ্যাস শোষণ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: গাছ ছায়া দেয় এবং বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে স্থানীয় তাপমাত্রা কম থাকে।
মাটি সংরক্ষণ: গাছের মূল মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখে, ফলে ভূমিক্ষয় বা মাটির ক্ষয় রোধ হয়।
জীববৈচিত্র্য রক্ষা: গাছ পশুপাখি ও অগণিত ক্ষুদ্র জীবের আশ্রয়স্থল, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ: বনভূমি ঝড়, বন্যা, ভূমিধস ইত্যাদির ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।
মানুষের জীবিকা ও স্বাস্থ্যে অবদান: গাছ থেকে আমরা ফল, কাঠ, ওষুধ, ছায়া ও নানান উপকরণ পাই, যা মানুষের জীবনধারার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
(4) বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) বলতে কী বোঝায়? বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী একটি গ্যাসের নাম লেখ।
উঃ – আমাদের নানারকম কাজকর্মের ফলে পরিবেশে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থের (CO2, CH4, জলীয় বাষ্প) পরিমাণ বেড়ে যায়। এইসব গ্যাসীয় পদার্থগুলোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাপকে পৃথিবীতে আটকে রাখে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। এটাই বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)।
বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী একটি গ্যাস হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড।
(5) বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট (Biodiversity Hot Spot) কী?
উঃ – পৃথিবীতে এরকম বহু অঞ্চল আছে যেখানে খুব বেশি সংখ্যক প্রজাতির জীব পাওয়া যায়। আবার সেই সব অঞ্চলে এমন সব প্রজাতির জীবও পাওয়া যায়, যা অন্য আর কোথাও পাওয়া যায় না। সেরকম অঞ্চল কে বলা হয় জীববৈচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ইংরেজিতে একেই বলে বায় ডাইভারসিটি হটস্পট (Biodiversity Hot Spot)।
(6) প্রবাল দ্বীপ ও প্রবাল প্রাচীর কি?
উঃ – (১) প্রবাল প্রাচীর: সমুদ্রের অগভীর জলে ক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণী প্রবাল (Coral) এর কঙ্কাল জমে জমে যে প্রাচীরের মতো গঠন তৈরি হয়, তাকে প্রবাল প্রাচীর বলে। এটি মূলত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দ্বারা গঠিত।
(২) প্রবাল দ্বীপ: যখন প্রবাল প্রাচীরগুলি সমুদ্রের উপরে উঠে এসে একটি দ্বীপের আকার নেয়, তখন তাকে প্রবাল দ্বীপ বলে। অর্থাৎ প্রবাল প্রাচীর থেকেই প্রবাল দ্বীপ গঠিত হয়।
উদাহরণ: ভারতের লক্ষদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ একটি প্রবাল দ্বীপ।

(7) মৃত্তিকা সংরক্ষণে জীববৈচিত্রের গুরুত্ব লেখো।
উঃ – মৃত্তিকা সংরক্ষণে জীববৈচিত্রের গুরুত্ব- (১) ঘাস জাতীয় উদ্ভিদেরা মাটির গঠন রক্ষা করতে সাহায্য করে। (২) মুলযুক্ত উদ্ভিদ মাঠের জল ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। (৩) ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া মাটিতে উপস্থিত উদ্ভিদের বৃদ্ধি সহায়ক বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ বজায় রাখতে সহায়তা করে।
(8) পরিবেশের নতুন জীবের আগমনে কি কি সমস্যা হয় তা লেখ।
উঃ – বাইরে থেকে আসা নতুন প্রানী অনেক সময় স্থানীয় প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাসের কারণ হয়। যেমন বিংশ শতাব্দীতে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বাইরে থেকে কুকুর, শুয়োর আর ছাগল নিয়ে আসা হয়েছিল। এই ছাগলরা কচ্ছপের খাবার, যেমন ঘাস, পাতা খেয়ে নিত। আবার কুকুর, শুয়োরেরা খেত কচ্ছপের ডিম। ফলে একসময় দেখা গেল কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেল। গ্রামবাংলার জলাভূমিতে আফ্রিকা থেকে তেলাপিয়া আর বিশাল মাগুর জাতের মাছ এনে ছেড়ে দেওয়ার ফলে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে মৌরালা, পুটি, খোলসের মতো স্থানীয় মাছেদের।
(9) খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজাল কাকে বলে?
উঃ – সূর্যের আলো ব্যবহার করে উদ্ভিদ এবং খাদ্য উৎপাদনের সক্ষম জীবেরা খাদ্য তৈরি করে। আর তাদের দেহের নানা অংশে এই খাদ্য সঞ্চিত থাকে। এরা হলো উৎপাদক। এই খাদ্য অন্যান্য জীবেরা ব্যবহার করে। যারা উৎপাদকদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বেঁচে থাক, তারাই হলো খাদক। খাদ্য খাদক এর এই সম্পর্কটাই হলো খাদ্যশৃঙ্খল। আর একটা খাদ্যশৃঙ্খল অন্যান্য খাদ্য শৃঙ্খলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে তৈরি করে খাদ্যজাল।

(10) গাছ কিভাবে জলচক্র নিয়ন্ত্রণ করে লেখ।
উঃ – গাছ জলচক্র নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হলো—
বাষ্পমোচন (Transpiration): গাছের পাতা থেকে জলীয় বাষ্প বাতাসে মিশে যায়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় এবং মেঘ সৃষ্টি হয়।
বৃষ্টিপাতের সহায়তা: গাছের নিঃসৃত জলীয় বাষ্প মেঘ তৈরি করতে সাহায্য করে, যা পরবর্তীতে বৃষ্টিপাতে পরিণত হয়।
মাটির জল সংরক্ষণ: গাছের শিকড় মাটিকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে, ফলে মাটির জল সহজে বাষ্পীভূত বা প্রবাহিত হয়ে নষ্ট হয় না।
জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ: গাছ বৃষ্টির জল শোষণ করে ও ধীরে ধীরে মাটিতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে, এতে বন্যা ও মাটিক্ষয় রোধ হয়।
গাছ বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাত সৃষ্টি, মাটির জল সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জলচক্রকে সুষ্ঠু রাখে।
(11) চারটি বায়োডাইভারসিটি হটস্পট এর নাম উল্লেখ কর এবং তাদের অবস্থান গুলি লেখ।
উঃ – চারটি বায়োডাইভারসিটি হটস্পট এর নাম উল্লেখ কর এবং তাদের অবস্থান গুলি নিচে আলোচনা করা হল।
(১) পূর্ব হিমালয় (Eastern Himalayas): সিকিম, দার্জিলিং, ডুয়ার্স, তরাই অঞ্চল।
(২) পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং শ্রীলংকা (Western Ghat and Srilanka): ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূল বরাবর ঘন অরণ্যে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চল।
(৩) ইন্দো-বার্মা (Indo-Burma): উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যসমূহ যেমন মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ।
(৪) সুন্দাল্যান্ড (Sundaland): ভারতের আন্দামান-নিকোবর অঞ্চল।
(12) জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? জীববৈচিত্র রক্ষা করা প্রয়োজনীয় কেন?
উঃ – পৃথিবীর আনাচে কানাচে অসংখ্য নাম না জানা উদ্ভিদ ও প্রাণী ছড়িয়ে আছে। আর আছে খালি চোখে দেখা যায় না যে জীবদের-সেই জীবাণুর জগৎ। কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সব ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী আর জীবাণুর বৈচিত্র নিয়েই জীবনের বৈচিত্র্য, যাকে এক কথায় বলা হয় জীববৈচিত্র্য।
জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা প্রয়োজনীয় কারণ—
1. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা: বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হলে এই ভারসাম্য নষ্ট হয়।
2. খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখা: জীববৈচিত্র্য থাকলে খাদ্যশৃঙ্খল সঠিকভাবে চলতে পারে। এক প্রজাতি হারালে অন্যদের উপর প্রভাব পড়ে।
3. ঔষধ ও সম্পদ প্রাপ্তি: বহু ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে পাওয়া যায়। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ মানুষকেও উপকৃত করে।
4. প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা: বৈচিত্র্যময় বন ও জীবজগৎ বন্যা, খরা ও মাটিক্ষয় রোধে সাহায্য করে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা দরকার পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা, খাদ্য ও ঔষধের উৎস সংরক্ষণ এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য।
(13) বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহ গলে গেলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে?
উঃ – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহ গলে গেলে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে তা নিচে দেওয়া হল। (১) হিমবাহ গুলো গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলতল বেড়ে যেতে পারে। (২) সমুদ্রের জলতল বেড়ে গেলে উপকূল অঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দেবে। (৩) হিমবাহের জলে পুষ্ট নদ নদীর জল প্রথমে বেড়ে যাওয়ার ও পরে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ফলে প্রথমে বন্যা আর পরে দেখা দিতে পারে তীব্র জল সংকট। (৪) হিমবাহ সম্পূর্ণ গলে গেলে সূর্যরশ্মি ভূভাগ দ্বারা শোষিত হয়ে পৃথিবীর উষ্ণতাকে অনেক বাড়িয়ে দেবে।
(14) জীববৈচিত্র কিভাবে জলবায়ুর স্থিতাবস্থা বজায় রাখে?
উঃ – জীববৈচিত্র্য জলবায়ুর স্থিতাবস্থা বজায় রাখে যেভাবে তার হলো- (১) পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়লে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। একমাত্র উদ্ভিদ আর কিছু অণুজীবরাই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। (২) উদ্ভিদেরা মূল দিয়ে যে জল শোষণ করে, তার বেশ কিছুটা অংশ বাস্পাকারে পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়, বৃষ্টিপাত বজায় রাখতে বনভূমি তথা উদ্ভিদেরা এভাবে সাহায্য করে।
Latest Posts:
- পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য- সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ বিজ্ঞান | Class 7 Science Chapter 8
- পরিবেশের সংকট, উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ-সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান | Class 7 Poribesh Chapter 7
- পরিবেশ গঠনে পদার্থের ভূমিকা (চতুর্থ অধ্যায়)- সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান | Class 7 Science Chapter 4
- সময় ও গতি (দ্বিতীয় অধ্যায়) সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান প্রশ্ম উত্তর | Class 7 Science Chapter 2
- আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও উদ্ভিদজগৎ-অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান| Poribesh Bigyan Class 8 Chapter 11




